আজি এ বসন্তে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:৩৩ পিএম
|
![]() ১৪ই ফেব্রুয়ারি, বাংলা পহেলা ফাল্গুন। শীতের বিদায় ঘন্টা বাজছে। বাংলা ক্যালেন্ডারে ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের প্রথম দিন এটি। প্রকৃতি একটু একটু করে বসন্তের সাজে সাজতে শুরু করেছে। চারিদিকে গাছে গাছে আমের মুকুল ধরেছে। মুকুলিত আমের ফুলে প্রজাপতি, মৌমাছি দলবেঁধে মধু আহরণ করছে। চড়ুই ও টুনটুনিরা বসন্তের গান গাইছে আর গাছে গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদ্যালয় খোলা। তাই শিক্ষক হিসেবে একটু কর্মব্যস্ত সময় পার করছি।আসলে কাজের মধ্যে থাকতেই ভালো লাগে।এতেকরে অন্তত অলস সময় পার করতে হয় না।যাইহোক,একটু আগেই বিদ্যালয় ছুটি হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা যে যার বাসায় চলে গেছে।প্রতিদিনের মত পাঠদান শেষে বিদ্যালয়ের মাঠে বসে আছি। ঘরিতে ঠিক দুপুর ২টা বাজে।মানুষ মধ্যাহ্নে আহারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীরব, নিস্তব্ধ দুপুর।কোথাও কেউ নেই।শুধু পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে।কোকিল গান গাইছে।মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।প্রখর রোদ্দুর। সূর্য যেন শীতের আলস্য কাটিয়ে তার পূর্ণ তেজ, শক্তি দিয়ে আলো দিচ্ছে।রৌদ্রে গা পুড়ে যাচ্ছে।একটু সরে গিয়ে পাশে একটা আম গাছের নিচে বসলাম। বসে আছি একদম বাঁধনহারা। ভালো লাগছে না।দুপুরের সময়টা হয়তো সবারই একটু খারাপ যায়।সময় কাটছে না।তাই একটু মোবাইলের দিকে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু না,শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। পাখির কিচিরমিচির ডাকে মনোযোগ আর ধরে রাখতে পারলাম না। পাখিগুলো খুব জ্বালাতন করছে আজ।কতো ধরনের যে পাখি এবং কতভাবে সেগুলো ডাকছে! কোকিল, টিয়া,শালিক,ময়না,বউ কথা কও,ঘুঘু আরো সব পাখির ডাক দূর থেকে কানে ভেসে আসছে। চারিদিকে আমের মুকুলের মৌমৌ ঘ্রাণ। মনে হচ্ছিলো, আজ প্রকৃতির সবকিছু আমাকে জানাতে উঠেপড়ে লেগেছে যে ঋতুরাজ বসন্ত চলে এসেছে। মোবাইলে ডুব দেওয়ার চেষ্টা করে ফের ব্যর্থ হলাম।একটা চড়ুই পাখি মাথার উপর দিয়ে ফুরুত করে উড়ে গেলো।মনোযোগ চলে গেলো সেদিকে। একটু দূরে কে যেনো কাকে ডাকছে।সে শব্দ কানে এসে লাগছে।মাঠ থেকে গরুর হাম্বা ডাক শোনা যাচ্ছে।পাশেই গাছের পাতার মর্মর শব্দ কানে বাজছে।কোনো কিছুই আজ আমার চোখ এড়াচ্ছে না এবং কান ফাঁকি দিতে পারছে না। একটা পাতা পড়ার শব্দ পর্যন্ত কানে ভেসে আসছে।মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল, সমস্ত শব্দ যেন আমাকে ইঙ্গিত করে কিছু একটা শোনাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে।বসন্তের প্রতিটি পাখি যেন আমাকে উদ্দেশ্যকরে বার বার ডেকে যাচ্ছে।প্রতিটি ফুল,মুকুল আমাকে ঘ্রাণ পৌঁছাতে জোড়ালোভাবে কাজ করছে। বিকেল হয়েছে।এখনো বসে আছি।তবে, গ্রামে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার তেমন কোন দৃশ্য চোখে পড়েনি। কোনো তরুণ বা তরুণীর বাসন্তী রঙের শাড়ি বা পাঞ্জাবি পড়ার দৃশ্যও দেখা যায়নি।খুব জমকালোভাবে বসন্ত উদযাপন করতেও দেখিনি।কোথাও কোনো আল্পনা আকাঁ দেখা যায়নি।বসন্তে কোন বাড়তি রঙও নেই এখানে।কিন্তু প্রকৃতি বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে, আজ বসন্ত। চারিদিকে বসন্তের ফুল কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল ফুটে একাকার হয়ে আছে। শিমুলের ডালে ডালে পাখিরা কিচিরমিচির গান গেয়ে বসন্তকে স্বাগত জানাচ্ছে।কৃষ্ণচূড়ার লাল ও হালকা হলুদ রঙের ফুলে বসন্তের বনে বনে গাছগুলো রক্ত স্নান করেছে। প্রকৃতিতে বসন্তের সাজ ছিলো একেবারে পূর্ণ। সব ধরনের ফুল ফুটে বর্ণীল হয়ে আছে চারপাশ। তবে, শহরে বসন্তকে বরণ করে নিতে জমকালো উৎসব হয়। তরুণ-তরুণীরা বসন্ত বরণের নানা পরিকল্পনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এবং ভবনগুলোতে আল্পনা আঁকে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ মানুষ সেদিন বাসন্তী রঙের কাপড় পড়ার চেষ্টা করে।কিন্তু সেখানে প্রকৃতির সাজে অসম্পূর্ণতা থাকে। ফের মোবাইলে মনযোগ দিলাম।ফেইসবুক স্ক্রল করছি।সেখানে শুধু ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। ফেইসবুকবাসীদের সবার মধ্যে একটু বাড়তি উচ্ছ্বাস খেয়াল করলাম।ভালোবাসা দিবসের বাধভাঙ্গা আবেগের জোয়ারে বসন্ত ঢাকা পড়ে গেছে সেখানে। আমি একটু সচেতন মনে বার বার অনুভব করার চেষ্টা করছি এবং নিজের সঙ্গে নিজে বলার চেষ্টা করছি যে আজ ভালোবাসা দিবস। কিন্তু না, নিজের মনকে সেই অনুভূতি দিতে পারছি না।মনকে যতবার চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি যে আজ ভালোবাসা দিবস।সে ততোবার আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বলে উঠেছে, না, আজ বসন্ত।এই দেখো বসন্তের কতো ফুল ফুটেছে আজ চারিদিকে। কতো পাখি গাইছে গান। লেখক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন শিক্ষক, রাওয়ান ইবনে রমজান স্কুল এন্ড কলেজ শিবালয়, মানিকগঞ্জ। |